কক্সবাজারের মানুষের চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল হলো ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগ, যেখানে মধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্র মানুষের ঠাঁই হয়। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আইসিইউসহ সদর হাসপাতালের বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এর কারণ হলো, যে প্রকল্পের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হতো, সেই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে ইতিমধ্যে এইচডিইউ সেবা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে সিসিইউ-এর বেড ২০ থেকে ১০ এ নামিয়ে আনা হয়েছে, আইসিইউ-এর ১০টি বেড থেকে এখন মাত্র ৭টি বেড চলমান। কক্সবাজারে মানুষ প্রাণপণ চেষ্টা করেও উপযুক্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না, যতটুকু চিকিৎসা নেয়া যাচ্ছে তা খুবই ব্যয়বহুল। এই কারণে অনেক মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারানোর শঙ্কায় হাসপাতালে প্রহর গুনছে।
বেতন না থাকলেও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু চিকিৎসক এবং নার্স এখনো চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছে, যদিও তাদেরও অনেকেরই বিকল্প আয়ের উৎস নেই। তারা জানেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে তারা মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু এই মনোভাব কতদিন টেকসই হবে? আমরা জানি, বাস্তবতা আর বর্তমান পরিস্থিতির কাছে তারাও হার মানতে বাধ্য হবে। কিন্তু এর থেকেও বড় সমস্যা হলো অনেক যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়েছে, অনেক যন্ত্রপাতি স্টক আউট হয়ে গেছে। কিছুদিন পর চিকিৎসক এবং সেবা কর্মীরা চাইলেও আইসিইউ, সিসিইউ পরিচালনা সম্ভব হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে বন্ধ হয়ে যাবে এই সকল কার্যক্রম। ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ কক্সবাজারের লাখ লাখ মানুষ এই প্রকল্পের দিকে তাকিয়ে আছে, আর তাদের আশার একমাত্র জায়গা এই হাসপাতালটি। তারা জানে, চিকিৎসা পেলে হয়তো তারা বাঁচবে, না পেলে হারিয়ে যাবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে রোগী নিয়ে চট্টগ্রাম যাওয়া এবং নতুন শহরে চিকিৎসা নেয়া, সেই সাথে আমাদের দেশের ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনেক দরিদ্র পরিবার, যারা এক সময় আশা করেছিল যে এই হাসপাতালে সেবা পাবেন, আজ তারা নিজেদের চিকিৎসা পাওয়ার জন্য লড়াই করছেন। চিকিৎসা না পেয়ে জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে ত্রাসিত হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ।
এইসব পরিস্থিতি, এই অসহায়ত্ব, হাসপাতালগুলো পরিদর্শন না করলে অনুভব করা যাবে না। একজন মা যখন তার সন্তানের চিকিৎসার জন্য কাঁদে, একজন বাবা তার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য এখান ছটফট করে, কিন্তু তার পকেটে টাকা নেই। আসলে, এটা শুধু কক্সবাজারের বিষয় নয়—এটা দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য এক দুঃখজনক চিত্র। আমরা চাই না চিকিৎসার অভাবে কেউ মৃত্যুবরণ করুক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিবে, এমনটাই আশা করছি।
লেখক:
মোঃ আরিফ উল্লাহ,
গবেষক ও উন্নয়নকর্মী
কক্সবাজার।
ইমেইল: arifcbiu@gmail.com
0 Comments