ঋণ তৈরির হাতিয়ার নয়; দুর্যোগ প্রশমনে নিজস্ব তহবিল নির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণের আহবান।
ঢাকা, ২৮ এপ্রিল ২০২৫। দুর্যোগ প্রশমনে ঋণের উপর নির্ভর না করে জাতীয়ভাবে স্ব-অর্থায়নে আঞ্চলিক অগ্রাধিকার পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি, জাতিসংঘ সংস্থা ও আইএনজিওদের সরাসরি প্রকল্প পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে, স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্ব প্রদানে সুযোগ দিতে হবে, দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং উপকূলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দূরীকরণে জলবায়ু সহিষ্ণু লবণমুক্ত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, উপকূলীয় মানুষের জীবন, সম্পদ এবং কৃষিজমি রক্ষায় টেকসই কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।, বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্থানীয় সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
আজ ঢাকার তোপখানা সড়কে জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের উপকূলে স্মরণকালের ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন ম্যারি এন- এর আঘাতে নিহতদের স্মরণে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে বক্তারা এসকল দাবিসমূহ তুলে ধরেন। সুন্দরবন উপকুল সুরক্ষা আন্দোলন, আরবান, উদয়ন বাংলাদেশ, কেরানীগঞ্জ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, এসডিও, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, কোস্ট ফাউন্ডেশন, ইক্যুইটি বিডি, উন্নয়ন সাবলোম্বী সংস্থা, আরবান নারী জাগরন, বিডিসিএসও প্রসেস এবং বিএনএনআরসি যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ইক্যুইটিবিডির মোস্তফা কামাল আকন্দ-এর সঞ্চলনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন, সুন্দরবন উপকুল সুরক্ষা আন্দোলন এর সমন্বয়ক নিখীল চন্দ্র ভদ্র, উদয়ন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শেখ আসাদ, ইয়থ অ্যাকশান ফর ডেভোলাপম্যান্ট এর সাহেদা খাতুন, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ এর শাহরিয়ার শাওন , কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম.এ. হাসান প্রমুখ।
ইয়ুথ অ্যাকশন ফর ডেভেলপমেন্টের সাহেদা খাতুন বলেন, মানুষের বর্জ্য এবং প্লাস্টিকের নির্বিচার ব্যবহার পরিবেশগত বিপর্যয় বাড়াচ্ছে, স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস করছে। এখনই টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি পরিবেশ রক্ষায় সরকার এবং পিকেএসএফ ও এমআরএ-এর মতো বৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যেমন ফিকাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং প্লাস্টিক রিসাইকেলিং প্ল্যান্ট সম্প্রসারণের উদ্যোগে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
শাহরিয়ার শাওন বলেন, যেকোনো দুর্যোগে ম্যানগ্রোভ বন আমাদের রক্ষা করে। কিন্তু রামপাল-মাতারবাড়ির মতো বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো এই বন ধ্বংস করেই তৈরি করা হচ্ছে। আমরা দাবি জানাতে চাই যে আমরা পরিবেশগতভাবে ধ্বংসাত্মক এই প্রকল্পগুলো থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে আসি। ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
এম.এ. হাসান বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনার উপর একটি জাতীয় কৌশল এবং ২০ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা [২০২২-২০৪২] গ্রহণ করেছে। তবে, ছয় বছর পেরিয়ে গেছে, এবং এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উদ্যোগ অস্পষ্ট। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ভবিষ্যতের বাস্তুচ্যুতির তীব্র সংকট মোকাবেলায় কেবল একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন যথেষ্ট নয়; জলবায়ু-সহনশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অগ্রাধিকার-ভিত্তিক বিনিয়োগ অপরিহার্য।
নিখীল চন্দ্র ভদ্র বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর ৩৪ বছর পেরিয়ে গেলেও, টেকসই উপকূলীয় সুরক্ষা ইস্যু বরাবরের মতোই আবহেলিত, এখনো দুর্যোগের খবরে উপকূলবাসীর দিন কাটে শংকা ও উৎকন্ঠায়, বেড়িঁবাধ ভেঙ্গে বিস্তৃর্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়, সবার আগে উপকূলীয় সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
শেখ আসাদ বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাসের ফলে তীব্র সুপেয় পানির সংকট তৈরি হয়েছে এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি পানীয় জলের তীব্র সংকট নিরসনে জলবায়ু-সহনশীল লবণাক্ততামুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপনের মাধ্যমে সুপেয় পানির সংকট দূড় করতে অবিলম্বে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, জাতিসংঘ সংস্থা ও আইএনজিওদের সরাসরি প্রকল্প পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে এবং স্থানীয় এনজিওদের নেতৃত্ব প্রদানেরে সুযোগ দিতে হবে, তিনি বলেন, সময় এসেছে আইএনজিও এবং দেশীয় এনজিও’র মধ্যে সমতা ও মর্যাদাভিত্তিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আত্মসম্মান এবং আত্ম উন্নয়নের বোধকে জাগ্রত করার।
রেজাউল করিম চৌধুরী, দুর্যোগ প্রশমনে জাতীয়ভাবে নিজস্ব তহবিল নির্ভর আঞ্চলিক অগ্রাধিকার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন, যা ঋণ তৈরির হাতিয়ার হবে না। তিনি বলেন, উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ এবং কৃষিজমি রক্ষার জন্য কংক্রিট বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, কংক্রিট ব্লক বাঁধ নির্মাণ এবং উপকূলীয় বনায়ন তৈরির জন্য সর্বাধিক ২,০০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, সরকারের উচিত সেই অনুযায়ী এই বাজেট বরাদ্দ করা। উপকূলীয় অঞ্চলের সুপেয় পানির সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য সরকারের উচিত লবণাক্ত পানি পরিশোধন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা।
0 Comments