স্থানীয় জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণের দাবি জানিয়েছেন তজুমদ্দিন উপজেলার নাগরিক সমাজ ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, নদীভাঙনকবলিত চরাঞ্চলে আশ্রয়নে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। কারণ ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায় নদীভাঙনের ফলে আয়তন দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে, আর মানুষ প্রতিনিয়ত স্থানান্তরিত হচ্ছে।
আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, কোস্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে তজুমদ্দিন উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে “সমন্বিত স্থানীয় জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শুভ দেবনাথ এবং সভাপতিত্ব করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ সেলিম মিয়া। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট হেড এম. এ. হাসান।
সেমিনারে বক্তারা জানান, গত ৫৩ বছরে ভোলার আয়তন অর্ধেকে নেমে এসেছে (১৯৬০ সালে ৬,৪০০ বর্গকিমি থেকে বর্তমানে ৩,৪০০ বর্গকিমি)। তজুমদ্দিন উপজেলার বড় মলংচরা, সোনাপুর, চাচড়া ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা এবং চাঁদপুরের ১ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর ফলে উপজেলার প্রায় ৩০-৪০% জমি হারিয়ে বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, বাস্তুচ্যুতদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাটের অভাব প্রকট। অনেক আশ্রয়ণের অবকাঠামো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কিছু প্রকল্প এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, ফলে ঘরগুলো খালি পড়ে রয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ন এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।
প্রধান অতিথি শুভ দেবনাথ বলেন, “বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতির হার বাড়ছে। সরকার বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে এ সমস্যার সমাধানে সরকারি ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”
সভাপতি মোঃ সেলিম মিয়া বলেন, “যেসব প্রকল্পে পানি সমস্যা রয়েছে, সেখানে টিউবওয়েল স্থাপন ও পুকুরের ঘাটলা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। গুচ্ছগ্রামগুলোর সংস্কারের পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে। সমন্বিত প্রচেষ্টায় কার্যকর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া পরিচালনা সম্ভব হবে।”
বক্তারা চরাঞ্চলে পুনর্বাসনের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ ও সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানান। পুনর্বাসন প্রকল্পের সঠিক স্থান নির্বাচন, অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেওয়া হয়।
সেমিনারে তজুমদ্দিন প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি এবং বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন ও গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন।
0 Comments