জলবায়ু বিপর্যয়ের ধাক্কা সামলাতে উপকূলীয় ক্ষুদ্র জেলেদের টেকসই উন্নয়নে বরাদ্দ ও কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

২৯ অক্টোবর, তজুমদ্দিন,ভোলা: জলবায়ু বিপদাপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় জেলেদের টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন উপকূলীয় ক্ষুদ্র জেলে সম্প্রদায় ও স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেন, অবরোধকালীন সময়ের ৪০ কেজি চাল দেয়া ছাড়া, সরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনায় ক্ষতিগ্রস্ত-সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র জেলেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ আমরা দেখিনি, আবার এই সব চাল বন্টনেও রয়েছে নানাবিধ সীমাবদ্ধতা, বঞ্চিত হচ্ছে অনেক জেলে। দীর্ঘ সময়ের অবরোধের পাশাপাশি ঘন-ঘন দুর্যোগের কারণে আগের মতো মাছ ধরা যাচ্ছেনা, দুর্যোগ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত ও বাস্তবসম্মত জ্ঞান, দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে প্রায় সময় সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় প্রান্তিক এই জেলে পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব কঠিন হয়ে পড়েছে, ঋণের জালে জর্জড়িত এখন প্রায় প্রতিটি পরিবার। বাল্য বিয়ে ,নারী নির্যাতন ও যৌতুক এর মতো সামাজিক সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, শিক্ষার হার সমাজের অন্যান্য পর্যায়ের তুলনায় অত্যান্ত পশ্চাদপদ। তাই সরকারের উচিৎ প্রান্তিক জেলেদের টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দিকে নজর দেয়া এবং উন্নয়নের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।




আজ ২৯ অক্টোবর, কোস্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলায়, উপজেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত “জলবায়ু বিপদাপন্ন উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায়; সরকারি সুরক্ষা সেবায় প্রবেশাধিকার ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক সেমিনারে বক্তরা এই সব কথা তুলে ধরেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব আমীর হোসেন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তজুমদ্দিন উপজেলার নির্বাহি কর্মকর্তা জনাব শুভ দেবনাথ, এছারাও মেরিন ফিশারজি অফিসার জনাব আলামিন, ক্ষুদ্র জেলে সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, ট্রলার মালিক সংগঠন, ক্ষুদ্র জেলে সংগঠন, সাংবাদিক প্রতিনিধি সহ অন্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা তাদের বক্তব্যে, জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ জেলেদের সুরক্ষায় সরকারের কাছে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন তারমধ্যে-চলমান প্রেক্ষাপটে অবরোধকালীন সময়ে জেলে পরিবারগুলোকে যে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই সামান্য এ দিয়ে পরিবারগুলোর দিন চলেনা, তাই মাছধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মাসিক ভাতা হিসেবে নুন্যতম প্রতি জেলে পরিবারের জন্য ৮০০০ টাকা বরাদ্দ করা, বর্তমান তালিকায় বিদ্যমান ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সংশোধন করা, জেলেদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ-বীমায় জরুরী ভিত্তিতে অন্তর্ভূক্ত করা, সকল প্রকার মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা এবং নিয়মানুয়ী প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত করা, ভূমিহীন জেলে পরিবারগুলোকে সরকারি খাস জমিতে পুর্নবাসন করা ও আদর্শ জেলে পল্লী তৈরি করার মাধ্যমে মৌলিক সেবা [শিক্ষা,স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি ও পয়: নিষ্কাশন ইত্যাদি] নিশ্চিত করা, জেলে পরিবারগুলোর জন্য আয় বৃদ্ধিমূলক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষন আয়োজন করা এবং প্রশিক্ষন শেষে উপকরন সরবরাহ করা, দুর্ঘটনা হ্রাসে আবহাওয়া সংবাদ জেলেদের কাছে পৌছানোর জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ এবং ব্যবহারে জেলেদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং ক্ষুদ্র জেলে নৌকাগুলোর জন্য মাছ ধরার নির্দষ্ট সীমা-রেখা তৈরি করে দেয়া যেনা বড় মাছধরার ট্রলারগুলো সেখানে মাছ ধরতে না পারে ইত্যাদি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শুভ দেবনাথ বলেন, ক্রটিপূর্ন জেলেদের তালিকা সংশোধন করা হবে,  ঝুকিপূর্ন ও ফিটনেসবিহীন ট্রলারগুলোর তালিকা তৈরি এবং সকল প্রকার মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে অতি দ্রুত নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে, কোন নিবন্ধিত জেলে সরকারি সহায়তা না পেলে সাথে সাথে প্রশাসনকে অবহিত করার আহবান জানান তিনি, এছারাও ব্যাংক সুবিধা ও আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন জেলেদের বরাদ্দের বিষয়ে সুপারিশকারে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে প্রেরণ করা হবে বলে উল্ল্যেখ করেন তিনি। সবশেষে প্রান্তিক জেলেদের অধিকার আদায়ে কোস্ট ফাউন্ডেশনের এ-ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নের প্রশংসা করেন এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে-কোন প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

Post a Comment

0 Comments