মৎস বিষয়ক ডব্লিউটিও’র প্রস্তাবিত খসড়া বাংলাদেশের মৎস খাত উন্নয়নে অন্তরায়

ডব্লিউটিও’র ত্রয়োদশ মন্ত্রী সম্মেলনের প্রাক্কালে নাগরিক সমাজের সেমিনার
মৎস বিষয়ক ডব্লিউটিও’র প্রস্তাবিত খসড়া বাংলাদেশের মৎস খাত উন্নয়নে অন্তরায়
Published from Blogger Prime Android App
ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪: বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ত্রয়োদশ মন্ত্রী সম্মেলনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলের সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে আলোচনা করার জন্য আজ ঢাকায় একটি সেমিনার আয়োজন করে ইক্যুইটি এন্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইক্যুইটিবিডি)। সেমিনার আয়োজনে সহযোগিতা করে কোস্ট ফাউন্ডেশন এবং আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইজ নট ফর সেল।

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনার সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্ধারিত বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৎস বিভাগের ডেপুটি চিফ (মেরিন) ড. মোহাম্মদ তানভীর হোসেন চৌধুরী, সিএসআরএল-এর জিয়াউল হক মুক্তা, কোস্ট ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক সনত কুমার ভৌমিক এবং ইন্টারনেট গভার্ন্যান্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক অনু।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের বরকত উল্লাহ মারুফ। মূল বক্তব্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান বিষয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে রয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের পর তাকে স্থায়িত্বশীল করার ব্যাপারে ডব্লিউটিও’র দ্বাদশ মন্ত্রী সম্মেলনে যেসব সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ছিল সেগুলো বাস্তবায়ন করা, মৎস খাত বিষয়ে বৈশ্বিক মৎস সম্পদ হ্রাসের জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিশিংকে দায়ী করে সেখানে উন্নত দেশের ভর্তুকি বন্ধ করা এবং দরিদ্র দেশে ক্ষুদ্র মৎসজীবীদের জন্য সুযোগ সুবিধা ও ভর্তুকি বৃদ্ধি, ই-কমার্স খাতে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের রাজস্ব আয়ের বাধা অপসারণ, কৃষি খাতে পাবলিক স্টকহোল্ডিং ও খাদ্য নিরাপত্তার সুযোগ সৃষ্টি করা, গণমানুষের ঔষধে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে ঔষধে মেধাস্বত্ব আইনে ছাড় দীর্ঘায়িত করা- ইত্যাদির জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে দেনদরবার করতে হবে।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্য প্রদানের সময় ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, স্বল্পোন্নত বা উন্নত দেশের এই বিভাজনটাই অনৈতিক। সবাই কোনো না কোনোভাবে উন্নয়নশীল দেশ। স্বল্পোন্নত বলে তার আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ পরিচয় অস্বীকার করেছিল। তবে, ১৯৭৫ সালে বাধ্য হয়ে আমরা এই পরিচয় গ্রহন করেছি। বিশ্ব বাণিজ্যের সুবিধা ও ক্ষমতা কাঠামোর জন্য এসব বিভাজন করে অল্প আয়ের দেশগুলোকে এভাবে বঞ্চিত করা হয়।
Published from Blogger Prime Android App
সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নত দেশের বাজারগুলোতে সবারই মার্কেট একসেস পাবার কথা। স্পেশাল এন্ড ডিফারেনশিয়াল ট্রিটমেন্টের বাইরেই এই সুবিধা পাবার অধিকার তাদের রয়েছে। কিন্তু কিছু ধনী দেশ বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্পকে সে সুবিধা থেকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের উচিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অভিযোগ নিষ্পত্তি পদ্ধতি ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা। 

মৎস বিভাগের ডেপুটি চিফ (মেরিন) ড. মোহাম্মদ তানভীর হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তার জন্য নির্ধারিত কোটা বৈশ্বিক মৎস আহরণের ০.৮% এর বেশি ইতিমধ্যে আহরণ করেছে। কাজেই বাংলাদেশ মৎস খাতে ভর্তুকি দিতে পারবে না। তবে, মৎস বিষয়ক চুক্তি বলবৎ হবার জন্য যতগুলো দেশের স্বাক্ষর করার কথা, আগামী দুই বছরের মধ্যে তারা সবাই স্বাক্ষর না করলে এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

ইক্যুইটিবিডির সচিবালয় সমন্বয়ক সৈয়দ আমিনুল হক তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা কী ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করবে, তার চেয়েও বড় কথা বাংলাদেশ নিজে মৎস নিয়ে কী পরিকল্পনা করছে এবং তার প্রস্তুতি কী? উন্নয়নশীল দেশ হয়ে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হবার আগে আমরা নিজেরা যদি মৎস খাতে সঠিক পরিকল্পনা করতে পারি তাহলেই আমাদের লাভ।

সভা সঞ্চালনাকালে ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কোস্ট ফাউন্ডেশন থেকে আমরা ২০০৫ সাল থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন এবং সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং কথা বলছি। আমাদের সরকারি প্রতিনিধি দল সেখানে কী অবস্থান নেবে সে বিষয়ে যদি আগে থেকে আমাদের অবহিত করে, তাহলে আমরা তাতে যুক্ত হতে পারি, প্রস্তুতি নিতে সহায়তা করতে পারি।

ইন্টারনেট গভার্ন্যান্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক অনু বলেন, ইন্টারনেটের প্রকৃত মালিকানা জনগণ হলেও দু-একটি বিদেশি কোম্পানি সেগুলোর মালিকানা নিয়ন্ত্রণ করছে, বাণিজ্য করছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো ফোরামে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।

Post a Comment

0 Comments