ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামে রেলওয়ে পাহাড়তলী এলাকায় বড় বড় কয়েকটি দিঘি ও ফয়েজ লেক স্থাপন করা হয়েছিল সারফেজ ওয়াটার ধরে রাখার জন্য। যার সুফল জনগণ এখনো পাচ্ছে। কিন্তু তার পরবতীতে সারফেজ ওয়াটার ধরে রাখার আর কোনা পরিকল্পনা আমরা করিনি। অপরদিকে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় ঢাকায় সারফেজের পানি ধরে রাখার জন্য লেকের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেমন রমনা, ধানমন্ডি, বনানী, হাতিরঝিল, শুলশান, উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকায় লেকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম শহর পরিকল্পনার সময় ঐ ধরনের কোন লেকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। গবেষণায় দেখা যায়, চট্টগ্রামে প্রতি বছর জলাশয়ের পরিমাণ ১০% হারে কমছে। সিডিএর (চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) কাগজপত্রে ৩৬টি খাল থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও ২০১৯ সালের জরিপে খালের সংখ্যা দেখা যায় ২২টি। আর বিস্ময়ের বিষয় হলো, এই ২২টি খালের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে দখল হয়ে আছে। কোন কোন জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আবার অনেকক্ষেত্রে খালের জায়গা দখল করে রাস্তা করা হয়েছে। এছাড়া অবাধে ময়লা আবর্জনা ফেলে খালগুলোর একাংশ ভরাট করা হয়েছে। ফলে প্রতিটি খালগুলো মরতে বসেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কলকারখানা ও নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে খাল-নালা-নর্দমা দিয়ে বিষাক্ত-দূষিত বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিক, রাবার জাতীয় অপচনশীল দ্রব্য সরাসরি কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে এ দুটি নদীতে প্রতিনিয়ত দূষণ বেড়েই চলেছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এক সমীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরী বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে নানাভাবে পায় আড়াইশ মেট্রিক টন পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্য মাছসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এতে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের রোগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের গবেষণায় দেখা যায় দখল-দূষণে শুধু কর্ণফুলী নদী নয় এর দুই পাড়ের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যও সংকটাপন্ন। এর মধ্যে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে এবং ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। শুধু যে কর্ণফুলী নদী দূষিত হচ্ছে তা কিন্তু নয়। দেশের একমাত্র জোয়ার-ভাটার প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হালদা নদীও নানাভাবে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে এই নদীতে বিচরণকারী নিরীহ প্রাণী ডলফিন। প্রায়ই মৃত ডলফিন ভেসে উঠছে হালদা নদীতে।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীসহ সারাদেশের নদী রক্ষার জন্য যে নদী কমিশন গঠন করা হয়েছে তারা নানা সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নির্দেশনা দিয়ে এলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তা স্থবির হয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবে ইপসা’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় “খাল জলাশয় রক্ষায় যুব সংলাপ”। এই সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্সটিটিউট অফ আর্কিকেক্ট চট্টগ্রাম চাপ্টারের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এর বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান, সাবেক কাউন্সিলর এবং কলামিস্ট আবিদা আজাদ, ইপসা প্রয়াস-২ প্রকল্পের সমন্বয়ক সানজিদা আক্তার এবং ইপসার ইয়ুথ ফোকাল জনাব আবদুস সবুর। যুব সংলাপে যুবরা (বাংলাদেশ এলায়েন্স অফ ইয়ুথ) খাল জলাশয় রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের প্রয়োগের ব্যাপারে জোর দেন।
0 Comments