চিঠি এক গরিব বান্দার


মো: ফাইসাল ফাহিম 
কবিতা লেখার যোগ্যতা নেই,
শব্দবুননের মতো সস্তা কর্ম ইহভূমে নাই।
আবার, এ বড় বড্ড ব্যাপার—
না বুননে না ফায়দা, বুনলেই বা কী হয়?
বরং আত্মপ্রবঞ্চনা।

অন্তঃ কি, না কি আন্তঃ?
আধ্যাত্মিক না জাগতিক?
আমি কি, আমরা-ই বা কে?
কেউই আরাধ্য শান্তির দেখা পাই না।
যতনে জ্বলিতে অগ্নি নাই,
না নদীতীরের নীরব বাতাস—
যা মনকে জাগিয়ে তোলে।

আমার অস্তিত্ব থাকে না, ‘আমরা’ ব্যতীত,
যখন আমাদের রক্তাক্ত করা হয়।
আমাদের খাদ্যের পুটলি ভরা শুভ্রতা ও হৃদপিণ্ডের লাল রং
ঘাতকের বুলেটে মিলে মিশে একাকার হয়।
শুরু হয় ক্ষয়,
প্রবল অপমান করে ভিড়
চিন্তার ভাঁজে, মনের পরতে পরতে।

সেই শব্দ নেই, সেই শক্তিও না—
যা আমাদের শান্ত করে।
বরং সাগরের ঢেউয়ের শব্দ
প্রবল তাচ্ছিল্যের ধাক্কা দেয় প্রাণে, মানে,
ধ্যানে—
কল্পনার ভাঁজে ভাঁজে
নিজেকে প্রশ্ন করি, শত বধির বাক্যযোগে।

কেন হে, বাঁচিয়ে রাখিলে প্রভু?
কেন বানালে ভিখারী, দু’পয়সার?
কেন মুসলমান বলে তোমার দুয়ারে ঠাঁই নেই?
কেন মানব-শত্রুদের মুখে আমাদের—
খাদ্য হিসেবে তুলে দাও?

এ তোমার কেমন বিচার, ওহে?
তুমি যদি দয়াবান,
তবে এত মানবসন্তানের আহ্বান শুনতে পাও না কেন?
প্রভু হে! সেই বিশ্বাস দাও—
তুমি বধির নও,
তুমি অন্ধ নও,
তুমি স্বার্থপর রক্তের বন্ধনের মতো নও।
তুমি মহান, মহীয়ান, মহৎ—
একান্ত প্রিয়, বড্ড দয়াময়।
বিশ্বাস ও ভালোবাসার কেন্দ্র—
মা ও বাবার তুলনায় অসীম, অসম, অভিব্যক্তি-অযোগ্য মহান।

আফসোস—
সেই মহান শব্দের পরিসর
ব্যক্ত করিতে দক্ষ বান্দা আমি নই,
হে রব্ব।

আশ্রয় দাও আমাদেরে,
আমাকে।
যদি, অন্য কোনো সিদ্ধান্ত তুমি নাও—
মোদের পাপ ও বেয়াদবির শাস্তি দাও।
তবে আমার মানুষ হওয়াটাই পাপ।
আদম-সন্তান হিসেবে নিজেকে ক্ষমা করতে
থাকবে না আর শক্তি।

আদম-সন্তান তো বানালে,
এবার তোমার রাসুলুল্লাহর সন্তান বানাও আমাদের।
এই রূহ, এই দেহ—
তোমার দাসত্বের নজির বানাও।
আমাদের রক্ত,
আমাদের জান—
হেফাজত করো তোমার কুদরতি হাতে।
যখনই কোনো অজ্ঞাত তৃষা জাগে,
তুমি-ই হয়ে যেও আবে হায়াত—
প্রিয়, প্রিয়তম, ইয়া রাব্ব।

আমাদের ভাঙা হাত,
আমাদের রূহ অন্ধ,
আমাদের ভঙ্গুর হায়াত—
আমরা শতাব্দীর নিকৃষ্ট মুসলিম সন্তান।
আমি জানি, এসব কবিতা নয়,
মনে করো তুমি—
কোনো এক গরিব বান্দা ও বান্দাদের
পরম যতনে পাঠানো চিঠি।
যে প্রেরক জানে না,
তা তোমার দরবারে পৌঁছবে কি না আদৌ।

আমি বিশ্বাস করি—
যে ঢেউ কেউই দেখে না,
তা তুমি দেখো।
যে ধ্বনি কেউই শোনে না,
সে ধ্বনি তুমি-ই শুনো।
যে কল্পরাজ্যে কেউই প্রবেশ করে না,
তুমি-ই জানো তা—
তোমারই সৃষ্টি।

জবাব দাও,
ঢেউয়ের পিঠে উচ্ছ্বাস পাঠাও।
হে! আমাদের রব্ব,
রক্তাক্ত মজলুম জাতির অভিভাবক।

Post a Comment

0 Comments