ত্রুটিপূর্ণ জেলে তালিকা সংশোধন ও জেলেদের বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান

ভোলা জেলার লালমোহনে কোস্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে জলবায়ু বিপদাপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায় এবং স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জেলেদের টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দাবি জানিয়েছেন। বক্তারা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলেদের জীবন-জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘন ঘন দুর্যোগের কারণে মাছ ধরার সময় কমে যাচ্ছে, মহাজন-নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার কারণে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

জেলেরা অভিযোগ করেন, বড় ট্রলারগুলো সব ধরণের মাছ ধরে নষ্ট করে ফেলায় ছোট ট্রলারগুলো প্রত্যাশিত মাছ পাচ্ছে না। এছাড়া, দেশের মৎস্য অবরোধকালীন সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশের ট্রলার মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ায় জেলেরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, অবরোধকালীন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় তা অত্যন্ত সীমিত এবং পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়।

সেমিনারে বক্তারা ত্রুটিপূর্ণ জেলে তালিকা সংশোধন, মাছ ধরার ট্রলার নিবন্ধন, মাসিক ভাতা প্রদান, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, ভূমিহীন জেলেদের পুনর্বাসন, এবং আদর্শ জেলে পল্লী গড়ে তোলার মাধ্যমে মৌলিক সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে জেলেদের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

প্রধান অতিথি লালমোহন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা জনাব আলী আহমদ আখন জানান, ট্রলার নিবন্ধনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তিনি জেলেদের জন্য ত্রুটিপূর্ণ তালিকা সংশোধনের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলার চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

সভাপতি জনাব আলহাজ্ব আবুল বসার সেলিম বলেন, প্রকৃত জেলেদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের জন্য বিনাসুদে ঋণ এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি জেলেদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি টেকসই পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান।

সেমিনারে ক্ষুদ্র জেলে সংগঠন, ট্রলার মালিক সংগঠন, কিশোরী প্রতিনিধি এবং স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।