ঔষধ শিল্পের কাঁচামালে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার তাগিদ নাগরিক সমাজের

সবার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ নিশ্চিত করতে ঔষধ শিল্পের কাঁচামালে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার তাগিদ নাগরিক সমাজের

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির অধীনে, বাংলাদেশকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলিকে পণ্যের পেটেন্ট প্রদান করতে হবে। এর ফলে তাঁরা তখন ক্রিটিক্যাল ওষুধ বা জীবন রক্ষাকারী ঔষধের  উৎপাদন, বিতরণ এবং মূল্য নির্ধারণের উপর একচেটিয়া অধিকার রাখবে এবং জেনেরিক উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। ২০২৬  সাল বা এর আরও কিছু পর পর্যন্ত বাংলাদেশী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলি কোন MNC একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই এই ওষুধগুলি তৈরি করতে পারে। এর পরে ওষুধের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে। তাই এখন থেকেই সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং ঔষধ সবার জন্য সহজলভ্য করতে এখনই কাঁচামালে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ।

Published from Blogger Prime Android App
আজ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কোস্ট ফাউন্ডেশন Bridging the Gap: TRIPS and Enhanced Access to Medicines in Bangladesh শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ। কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মো. মজিবুল হক মনির। এতে আরও বক্তৃতা করেন ভারতের ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের সাবেক অধ্যাপক ড. সুদিপ চৌধুরী, ন্যাশনাল কমিটি অন হেলথ মুভমেন্টের সভাপতি ডা. রশীদ ই মাহবুব, উবিনীগের ফরিদা আক্তার, ওয়াটার কিপার বাংলাদেশের শরীফ জামিল, থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের রানজা সেনগুপ্তা এবং একই সংস্থা প্রতিভা সিভাসুভ্রামানিয়ান। 
মো. মজিবুল হক উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সহজলভ্য ঔষধ নিশ্চত করা খুবই জরুরি কারণ দেশে মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় যে খরচ হয় তার ৪৪%-ই হয় ঔষধে। দেশের প্রায় ৯৮% চাহিদা পূরণ করে প্রায় ১৪৭টি দেশে ঔষধ রপ্তানি করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হলেও যাতে সবার জন্য ঔষধ নিশ্চিত করা যায়  সেজন্য তিনি সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন- কাঁচামালে আত্মনির্ভরশীল হওয়া, ঔষধ শিল্পে গবেষণা ও উন্নয়নে গুরুত্বারোপ, স্বাস্থ্য খাততে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং সকলের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করা। 
ড. সুদীপ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের  ভিতরেই ঔষধের কাঁচামালের বাজার তৈরি করতে হবে, এর জন্য সরকারের নীতিসহায়তা প্রয়োজন। প্রতিভা সিভাসুভ্রানিয়ান বলেন, বাংলাদেশের প্যাটেন্ট আইন ২০২২-এ কিছু সংশোধনী আনা খবু প্রয়োজন। সেখানে দেশের প্রয়োজনে প্যাটেন্ট করা ঔষধ তৈরির জন্য দেশীয় কোম্পানিকে প্যাটেন্ট অধিকার ভাঙ্গার সুযোগ করে দিতে হবে। যে কেউ যেন কোনও প্যাটেন্টের বিষয়ে আপত্তি জানাতে পারে সেই সুযোগ রাখতে হবে। রানজা সেনগুপ্ত বলেন, সবার জন্য ঔষধ নিশ্চিত করতে হলে নাগরিক সমাজকে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। ফরিদা আখতার বলেন, ঔষধকে কেবল একটা পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ নয়। দেশের ভিতরে দেশীয় কিছু কোম্পানিও একচেটিয়া ব্যবসা করে, সেটিও বন্ধ করা জরুরি। রশিদ ই মাহবুব বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে ঔষধ শিল্পের সমস্যা সমাধান করেই সবার জন্য ঔষধকে সহজলভ্য করা যাবে। 
ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঔষধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে যৌথ গবেষণার ব্যবস্থা থাকতে হবে, সেই ব্যবস্থা তৈরির জন্য সরকারের নীতিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। তাছাড়া ভবিষ্যতে বদলে যাওয়া পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন থেকেই দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। পুরো স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। 
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের অনেক অর্জন আছে, কিন্তু গত চল্লিশ বছর আমরা বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলাম আত্মনির্ভরশীল হওয়ার, আমরা সেটা হতে পারিনি। আমাদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ঔষধ শিল্প গড়ে তুলতে হবে, যাতে সকলের জন্য সহজলভ্য ঔষধ নিশ্চিত করা যায়।

Post a Comment

0 Comments