বিশ্লেষণধর্মী ও স্থানীয় সংস্কৃতিনির্ভর অনুষ্ঠান তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজীব।

 

বিশ্লেষণধর্মী ও স্থানীয় সংস্কৃতিনির্ভর অনুষ্ঠান তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন

রেডিও সৈকতের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজিব।



 

কক্সবাজার, ২৩ জুলাই ২০২৫-

রেডিও সৈকতের স্থানীয় উপদেষ্টা কমিটির দ্বিতীয় সভা আজ (বুধবার) বেলা ১২টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজিব। সঞ্চালনা করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক (পার্টনারশিপ) সোহেল ইকবাল।

সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার মোঃ তামযীদূর রহমান তন্ময় এবং সহকারী কমিশনার মির্জা মোঃ তাওসিফ শরিফ স্নিগ্ধ। এছাড়া উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা তথ্য কর্মকর্তা আব্দুস সাত্তার, কক্সবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিক আলম আসিফ, বাংলাদেশ বেতারের সহকারী পরিচালক আহমেদ মুন্তাসির চৌধুরী, কক্সবাজার পৌরসভার সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা শামিম আক্তার, কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল জলিল।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য মোর্শেদুর রহমান খুকন, এপিপি আবু মুসা মোহাম্মদ, আইনজীবী সাকি এ কাউসার, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাবেক অধ্যক্ষ মকবুল আহমেদ, সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কাদের বাবুল, আইনজীবী সাজ্জাদ হোসাইনসহ রেডিও সৈকতের কলাকুশলী গণ।

সভায় রেডিও সৈকতের স্টেশন ম্যানেজার বিগত এক বছরের বিভিন্ন কার্যক্রম পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। পরে উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা রেডিও সৈকতের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মতামত প্রদান করেন।

ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, রেডিও সৈকতের যে অনুষ্ঠানমালা রয়েছে, তা যদি ব্যতিক্রমধর্মী উপস্থাপনা কৌশলের মাধ্যমে শ্রোতাদের কাছে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে কমিউনিটি এনগেজমেন্ট উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। কক্সবাজার যেহেতু একটি পর্যটন নগর, তাই এই পর্যটন শিল্পের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে নানা ধরনের তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান তৈরি করা যেতে পারে।

বিশেষভাবে বিশ্লেষণধর্মী এবং স্থানীয় সংস্কৃতিনির্ভর অনুষ্ঠান তৈরির ওপর গুরুত্বা দিতে হবে, বর্তমানে মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর, তাই আমাদের ফেসবুক পেইজ এবং ওয়েবসাইটকে আরও তথ্যসমৃদ্ধ ও ব্যবহারবান্ধব করতে হবে, যেন যে কেউ সহজেই কাঙ্ক্ষিত তথ্য মুহূর্তের মধ্যে হাতের কাছে পেতে পারে। এনিমেটেড পোস্ট দিলে শ্রোতারা বেশি কানেক্টেড থাকবে। আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবেকার জন্য অনুষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। সেই অনুযায়ী অনুষ্ঠান নির্মাণ ও ভাষা নির্বাচনের দিকে লক্ষ রাখা, যাতে আমাদের নির্ধারিত শ্রোতারা সহজেই বিষয়বস্তু বুঝতে পারে।

মির্জা মোঃ তাওসীফ শরীফ স্নিগ্ধ বলেন, এছাড়া জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে এমন অনুষ্ঠান নির্মাণ করা যেতে পারে, যেগুলো জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় সেবাসমূহ তুলে ধরে। এতে অনুষ্ঠানগুলো আরও বেশি জনহিতকর ও সচেতনতামূলক হবে। কক্সবাজার শহরে প্রায়ই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। এই কার্যক্রমগুলো রেডিও সৈকতের মাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে। বিশেষ করে, কোন আইনের কোন ধারায় কী ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরলে সাধারণ জনগণ আইনি বিষয় সম্পর্কে সচেতন হবেন এবং নিজেরাও আইন মানার ব্যাপারে উৎসাহী হবেন।"

 


 

মোহাম্মদ তামজিদুর রহমান তন্ময় বলেন, সমসাময়িক ও সেবামূলক পোস্টগুলো প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সহজভাবে উপস্থাপন করতে ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রোগ্রামে ভিন্নতা আনার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে শ্রোতাদের আগ্রহ ধরে রাখা যায়।"

আব্দুর সাত্তার বলেন, "সরকারি-বেসরকারি সকল দপ্তরের মূল কাজ হলো জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা। রেডিও সৈকতও সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। আমি লিগ্যাল এইড সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এর প্রচার-প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সাথে গুজব ও অপপ্রচার রোধে ‘ফ্যাক্ট-চেকিং’-এর মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করছি।"

আইনজীবী আবু মোসা মোহাম্মদ বলেন, রেডিও সৈকত কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়, তবুও তারা মানুষের উন্নয়নের জন্য তথ্যভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি নারী নির্যাতন, শিশু সুরক্ষা ও ইভটিজিং বিষয়ক অনুষ্ঠান আঞ্চলিক ভাষায় নির্মাণের পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই বিষয়গুলো বুঝতে পারে।

এডভোকেট সাকি এ কাউসার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যেসব আইনে নতুন করে সংশোধনী আসছে, সেগুলো এখনো ভালোভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায়নি। এই পরিস্থিতিতে রেডিও সৈকত চাইলে আইনি বিষয়ক সেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সাপ্তাহিক আলাপচারিতা বা টকশোর আয়োজন করতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

জনাব নুরুল ইসলাম বলেন, রেডিও সৈকত যেহেতু পরিবেশ সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেক্ষেত্রে এমন কিছু গাছ রয়েছে যেগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। নির্দিষ্টভাবে সেই দুইটি গাছ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে রেডিও সৈকত বিশেষ অনুষ্ঠান তৈরি করে প্রচার করতে পারে, যাতে মানুষ এ ধরনের গাছ রোপণ থেকে বিরত থাকে।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা রেডিও সৈকতের কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানান এবং আরও জনমুখী, তথ্যবহুল ও সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান তৈরির পরামর্শ দেন। সভা শেষে অংশগ্রহণকারীরা রেডিও সৈকতের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে সহযোগিতার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

Post a Comment

0 Comments